ঢাকাই সিনেমায় ‘মিষ্টি মেয়ে’ নামে পরিচিত সারাহ বেগম কবরী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আগমন, আর ১৪ বছর বয়সে ‘সুতরাং’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ। তারপর তো একে একে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। অভিনয় দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন চলচ্চিত্রাঙ্গন, পেয়েছেন মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। এই প্রিয় মানুষটি সবাইকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে। সে হিসেবে আজ তার প্রথম প্রয়াণ দিবস।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন পরিচালক ও প্রযোজক। সর্বশেষ সরকারি অনুদানের একটি সিনেমার নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ করে যেতে পারলেন না। তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি আসন থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যুক্ত হয়েছিলেন নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে।

১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন কবরী। এই শিল্পী ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তার নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতির চর্চাকে সঙ্গী করে।

মাত্র ১৪ বছরে ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত হন কবরী। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে উপহার দেন ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবরী।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্র পায় বেশ জনপ্রিয়তা।

নায়ক ফারুকের সঙ্গে তার ‘সারেং বউ’ ও ‘সুজন সখী’ সিনেমা দুটি কালজয়ী হয়ে আছে৷ ‘সুজন সখী’ সিনেমাটি ব্যবসায়িক দিক থেকে ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে মাইলফলক।

এছাড়া কবরী পার্বতী চরিত্রে দর্শক মাতিয়েছেন বুলবুল আহমেদের সঙ্গে ‘দেবদাস’ সিনেমায়। তিনি নায়িকা হয়েছেন সোহেল রানা, উজ্জ্বল, আলমগীর, জাফর ইকবালের বিপরীতেও।

অভিনয়ের পাশাপাশি ছিলেন একজন পরিচালক ও প্রযোজক। ২০০৫ সালে ‘আয়না’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। সর্বশেষ শুরু করেছিলেন সরকারি অনুদানের একটি সিনেমার নির্মাণকাজ। কিন্তু শেষ করে যেতে পারলেন না।

কবরীকে ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ সরকার। ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া ৫ বার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।

কবরী যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।